
ব্যক্তিগত জীবনে সুখী যারা, দেখবেন ক্যারিয়ারে কিংবা পেশাগত জীবনেও তারা বেশ আত্মবিশ্বাসী। আর ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে যারা সুখী, সাফল্যও তাদেরই পদতলে লুটিয়ে পরে। তাই সবাই হন্যে হয়ে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সাফল্যের গুপ্তমন্ত্র খোঁজে। আর সেই গুপ্তমন্ত্রের খোঁজ দিতেই প্রতিবছরই নতুন নতুন ‘সেলফ-হেল্প’ বা আত্মউন্নয়ন মূলক বই বের হয়।
সারাবিশ্বেই ‘নন ফিকশন’ বই হিসেবে এসব ‘সেলফ হেল্প’ কিংবা আত্মউন্নয়ন মূলক বইয়ের দারুণ চাহিদা। তবে নানাবিধ কারনে বাংলায় মান সম্মত ‘সেলফ হেল্প’ বই তেমন নেই। আবার ইংরেজিতে লেখা বইগুলো দেশে সহজে পাওয়া যায় না, আর পাওয়া গেলেও দাম বেশ চড়া। তাছাড়া ইংরেজি বই পড়তে অনেকেই স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। অথচ এই বইগুলোর জ্ঞান আর শিক্ষা আমাদের তরুন পাঠকদের জন্য খুবই জরুরী আর অবশ্যপাঠ্য!
বেস্ট সেলিং ‘সেলফ হেল্প’ বইগুলো পড়ার সময় আমি টেক্সট মার্কার দিয়ে দাগিয়ে কিংবা কলম-পেন্সিল দিয়ে আন্ডারলাইন করে করে পড়ি। কারন ফিকশন গল্পের বইয়ের মত এসব বই এক বসায় পড়ে ফেলা ঠিক না। ‘সেলফ-হেল্প’ বই পড়তে হয় বুঝে বুঝে। কারন বইয়ের শিক্ষনীয় বিষয়টুকু অনুধাবন করতে আর নিজের জীবনে কিভাবে কাজে লাগানো যায় তা আত্মস্থ করতে বইয়ের চুম্বক অংশগুলো বারংবার পড়বার কোনো বিকল্প নেই। তাই ভাবলাম, আমার পড়া সেরা ‘সেলফ হেল্প’ বইয়ের চুম্বক অংশ গুলো একসাথে করে আমার পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করি। আমার পছন্দের সেরা পাঁচটি ‘সেলফ-হেল্প’ বইয়ের সামারি বা সারসংক্ষেপ এই বইয়ে আমার মত করে উপস্থাপন করেছি। বই পাঁচটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটা স্ট্রেটেজি অনুসরন করেছি যা পাঠক পড়তে শুরু করলেই টের পাবেন। সেই সাথে তরুন পাঠকদের জন্য বোনাস হিসেবে থাকছে জব সার্চ, সিভি লেখা, ইন্টারভিউ আর ক্যারিয়ারে ভাল করবার কৌশল সংক্রান্ত দুটো লেখা। হ্যাপি রিডিং।
সূচীপত্র
গৌতম বুদ্ধের বাবা ছিলেন রাজা। তিনি ছেলের জন্য ‘হ্যাপি লাইফ’ নিশ্চিত করতে দেয়াল ঘেরা স্বর্গের মত প্রাসাদ গড়ে দিলেন; আরাম আয়েশের কোনো ঘাটতি ছিল না তার। সেই আরামে থাকতে থাকতে একদিন ত্যক্ত বিরক্ত গৌতম দেয়াল টপকে বাইরে পালালেন। বাইরে তিনি দুঃখী মানুষ, অসুখী মানুষ, অসুস্থ মানুষ আর গরীব মানুষ দেখে অবাক হলেন, ব্যথিত হলেন। তাই নিজেও একদিন প্রাসাদ ছেড়ে ভিক্ষুকের মত পথে পথে ঘুরতে শুরু করলেন। অনেকদিন ঘুরাঘুরির পর তিনি অবাক হয়ে আবিষ্কার করলেন যে সুখে থাকতেও তিনি যেমন অতৃপ্ত ছিলেন, কষ্টে থেকেও তার ভোগান্তি একবিন্দুও কমে নাই! তিনি বুঝলেন, জীবন মানেই আসলে কষ্ট। ধনী কষ্টে আছে তার সম্পদ নিয়ে, গরীব তার দারিদ্র নিয়ে। ‘ফ্যামিলি-ম্যান’ আছে ফ্যামিলি নিয়া যন্ত্রণায় আর ফ্যামিলি-হীন আছে নিঃসঙ্গতার কষ্টে। সুতরাং অমুকের মত হইলেই ‘হ্যাপি’ হওয়া যাবে, এই ধারনাটাই ভুল। হ্যাপিনেস ইজ নট আ সল্ভেবল ইকুয়েশন। জীবনে ‘হ্যাপি’ হবার মন্ত্র একেবারেই আলাদা।
(দ্য সাটল আর্ট অফ নট গিভিং আ ফাক)
আমরা শুরু করব মার্ক ম্যান্সনের ‘দ্য সাটল আর্ট অফ নট গিভিং আ ফাক’ বইটি দিয়ে। কারন এই বইটি অনেককেই তাদের নিজেদের জীবনে ফোকাসড হতে সহায়তা করেছে। আর জীবনে সফল হতে ফোকাসড থাকাটা খুবই জরুরী!

এরপর আমরা ধরব জেনসিন্সেরোর ‘ইউ আর আ ব্যাড এস’ বইটি। কারন এই বইটি অনেককেই শূন্য থেকে শুরু করার অনুপ্রেরণা দেয়।
আমাদের নিজেদের চিন্তা-ভাবনাই আমাদের সবচে বড় অস্ত্র! তাই প্রথমেই নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনি কী চান? হয়ত বেসম্ভব কিছু চেয়ে বসেছেন, কিন্তু সমস্যা নেই। এবার বিশ্বাস করার চেষ্টা করুন যে, যা চেয়েছেন, তা আপনার প্রাপ্য আর এর জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। তারপর নিজের চারপাশের পারিপার্শিকতায় চেঞ্জ আনুন, যেন আপনার প্রস্তুতিটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। দেয়ালে একটা বোর্ড ঝোলান আর নিজের কর্মপন্থা লিখে ঝুলিয়ে দিন যেন বারবার চোখে পরে। আর নিজের সমমনা লোকদের সাথে চলার চেষ্টা করুন।
( ইউ আর আ ব্যাড এস )

নিজেদের অভ্যাসগত উন্নয়নের জন্য এরপর আমরা পড়ব মাইকেল চ্যাপম্যানের ‘৫০ পজেটিভ হ্যাবিটস।’ মাইকেল চ্যাপম্যানের লেখা “৫০ পজেটিভ হ্যাবিটস” বইটা আসলে একটা চেক লিস্ট; প্রতিদিনের জীবনে ইতিবাচক কিছু অভ্যাসের চেকলিস্ট। ফিজিক্যাল আর মেন্টাল ফিটনেস, আবেগ নিয়ন্ত্রন, লাইফস্টাইল সহ দৈনন্দিন নানান বিষয়ের উপর তিনি এই বইয়ে আলোকপাত করেছেন ।

সমালোচনা অর্থহীন, কারন সমালোচনা মানুষকে ডিফেন্সিভ করে তোলে আর সে নিজেকে জাস্টিফাই করতে উদগ্রীব হয়ে উঠে। সমালোচনা বিপদজনকও বটে, কারন তা মানুষের গৌরবকে আঘাত করে, তার ইগোকে আঘাত করে আর তার মনে ঘৃনার উদ্রেক করে। তাই নিজের ভাবাবেগ আর করনীয়, এই দুইয়ের ফারাক বুঝুন। নিজের মত করে সবাইকে ভাবতে আর মাপতে যাবেন না। ওন্যের সমব্যথী হোন, আর ক্ষমা করতে শিখুন।
(হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস এন্ড ইনফ্লুয়েন্স পিপল)

সাফল্যের পথে জনপ্রিয় হবার আর অন্যদের উপর নিজের প্রভাব বিস্তারের উপায় নিয়ে এরপর পড়ব বিখ্যাত ডেল কার্নেগির ‘হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস এন্ড ইনফ্লুয়েন্স পিপল’ বইটির সারসংক্ষেপ। ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হবার পর অলরেডি ৩০ মিলিয়ন কপির বেশি বিক্রি হওয়া এই বই আজো আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে ইনফ্লুয়েন্সিয়াল বই হিসেবে স্বীকৃত।
রবার্ট গ্রিনির অনবদ্য সৃষ্টি ‘দ্য ৪৮ লজ অফ পাওয়ার’ হলো পাওয়ার হাংরিদের মাইন্ডসেট শেইপ আপ করার সেরা টনিক!

সম্রাট চতুর্দশ লুইয়ের ফিনান্স মিনিস্টার ছিলেন নিকোলাস ফুকে। দারুণ বুদ্ধিমান আর নিদারুণ বিলাসী ছিলেন তিনি; তাকে ছাড়া সম্রাটের চলতই না। প্রধানমন্ত্রী জুলস মার্জারিন মারা যাবার পর ফুকে সম্রাটের নেক নজর হাসিল করতে তার প্রাসাদোপম বাড়িতে বিশাল এক পার্টি দিলেন আর সম্রাটকে দাওয়াত দিলেন। সে ছিল এক ল্যাভিস পার্টি!রাজকীয় হেন আয়োজন নাই যা সেই পার্টিতে ছিল না।
দারুণ সেই পার্টি শেষে পরদিন সকালে ফুকেকে গ্রেপ্তার করা হলো রাজকোষের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে!ঠাই হল দেশের সবচে কঠিন কারাগারে। যাহোক, ফুকেকে সরিয়ে দিয়ে সম্রাট নতুন ফিনান্স মিনিস্টার বানিয়েছিলেন কিপ্টে কোলবার্টকে আর কোলবার্ট যে টাকা সেভ করে দিয়েছিল সম্রাট তা দিয়ে ফুকের আর্কিট্যাক্টকে দিয়ে আরেকটা প্রাসাদ বানালেন, ফুকের ডিজাইনার দিয়ে সেই প্রাসাদ সাজালেন আর ফুকের ইভেন্ট ম্যানেজারকে দিয়ে জম্পেস আরেকটা পার্টি দিলেন। লোকে স্বীকার করল, এই পার্টি ফুকের পার্টির চেয়ে জোস হইসিল!
কী ঘটনা শুনে অবাক হইসেন? ঘটনা আর কিছুই না; সম্রাটের চেয়ে ল্যাভিস পার্টি দিতে গিয়ে ফুকে সাহেব সম্রাটের চক্ষুশুল হয়েছিলেন। আর এই জন্যই বলে, নিজের বসের চেয়ে কাবিল হতে যাবেন না কক্ষনো।
(দ্য ৪৮ লজ অফ পাওয়ার)
ফাইনালি, আমরা ‘ফ্রেশয়ার’দের জব সার্চ, সিভি লেখা, ইন্টারভিউ আর ক্যারিয়ারে ভাল করবার কৌশল নিয়ে মজার আলোচনা করব।
(জীবন, ক্যারিয়ার আর সাফল্যের কথা নিয়ে “জাগো” আসছে! সবার দোয়া চাই )

1 thought on “জীবন, ক্যারিয়ার আর সাফল্যের কথা নিয়ে “জাগো””
ধন্যবাদ, ভাই।