ফান্ডা খান আর্মিতে খুব মজার এক জার্গন, যেমন সিনিয়র এনসিওরা জুনিয়র জওয়ানদের মাঝেমাঝেই ” তুমি কি ফান্ডা খান বনসো…” বলে তিরস্কার করেন। আজকের স্যাটারডে স্যাটায়ারের বিষয় হোক ফান্ডা খান।
সেই ফান্ডা খানের ‘সিতারা ঈ জং’ লাভের খবর শুনে তার প্যারেন্ট ইউনিটের সিও, টু আইসি তো বটেই, এমনকি তার রিক্রুটিং অফিসারের দুই চোখও কপালে উঠে গিয়েছিল…”ফান্ডা খান বান গ্যায়া ‘সিতারা ঈ জং’…ক্যামনে কী!!!
ফান্ডা খান তেজ সৈনিক, তার বাবাও পুলিশের তেজস্বী কনস্টেবল ছিলেন। একরাতে তাদের বাসায় চুরি হলে পরদিন থানার দারোগা ফান্ডা খানের বাবাকে ডেকে বেশ শ্লেষের সাথেই জিজ্ঞেস করলেন, “কেমনতর পুলিশ তুমি? তোমার নিজের বাসায় চোর ঢুকল, তুমি টেরও পেলে না…?!?”
ফান্ডা খানের বাবা বিব্রত জবাব দিল, “আমার পরিবার কিন্তু ব্যাপারটা টের পেয়ে আমাকে একবার ডাক দিসিল স্যার।” জবাব শুনে বিস্মিত দারোগা বললেন, “বল কী, তাহলে চোর পাকড়ালে না কেন?” জবাবে সিনা চিতায়ে পায়ের গোড়ালি উঁচু করে ফান্ডা খানের বাবা বলেছিল, “কিন্তু আমার তো তখন ডিউটি ছিলনা স্যার, আমি তো রেস্টে ছিলাম, তাই পরিবারকে বলসিলাম অন ডিউটি কারো কাছে গিয়ে রিপোর্ট করতে….।”
তো ফান্ডা খান পৈতৃক সুত্রেই এই গুনটা পেয়ে গেসে, ডিউটি যেমন তেমন দিক, ডিউটি শেষ হবা মাত্র ঝাপিয়ে রেস্টে যেতে তার কক্ষনই দেরী হয় না।
পাষট্টি সালের পাক ভারত তুমুল যুদ্ধ চলছে তখন। দুই দেশের জেনারেলরাই দুইদিনের ভেতর দিল্লি অথবা করাচি গিয়ে চা নাস্তা করে ফেলার প্ল্যানের পর প্ল্যান করে যাচ্ছেন।
পাক ফ্রন্টে বসে সহকারী মেশিনগানার ফান্ডা খান নিজের ডিউটি শেষ হবা মাত্র ট্রেঞ্চের ভেতরই ঘুমিয়ে গেল। ভোরের দিকে ইন্ডিয়ানরা যখন ব্রিগেড এটাক লঞ্চ করল তখনো ফান্ডা খান গভীর ঘুমে। আক্রমনের তোড়ে একসময় তার ব্যাটালিয়ন পিছু হটল, কিন্তু তার সাথি ভাইয়েরা ঘুমন্ত ফান্ডা কে মৃত ভেবে ট্রেঞ্চেই ফেলে চলে গেল।
সকালে ঘুম ভেংগে চোখ খুলতেই ফান্ডা খানের চক্ষু ছানাবড়া! চারপাশে সব ইন্ডিয়ান সৈন্য গিজগিজ করছে। সদ্য এটাক শেষে তারা তখন সবে দম ফেরত পাবার চেস্টা করছে।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় ফান্ডা খান খপ করে তার হেভি মেশিন গানটার ট্রিগার চেপে ধরল। তারপর চারপাশে বৃস্টির মত গুলি করা শুরু করল। এমন ক্লোজ রেঞ্জে হেভি মেশিনগানের গুলি ভয়াবহ রকমের লিথাল, ফান্ডা খান মুহুর্তেই প্রায় এক কোম্পানি ইন্ডিয়ান সেনা নিকেষ করে দিল।
ঐদিকে ইন্ডিয়ানরা ভাবল নিশ্চয় পাকিরা কাউন্টার এটাক শুরু করেছে, তাই দ্রুত পিছু হটল। পাকি রিলিভিং ব্যাটালিয়ন ফিরে এসে দেখে ফান্ডা খান একাই ইন্ডিয়ান এটাক ফিরিয়ে দিয়েছে। সংগে সংগে সিও ফান্ডা খানকে জওয়ান থেকে ল্যান্স নায়েক করে দিলেন, ব্রিগেড কমান্ডার এসে করে দিলেন নায়েক, জিওসি এসে হাবিলদার বানিয়ে দিলেন, সবশেষে সেনাপ্রধান তাকে সাবাশি দিতে গিয়ে আনপেইড র্যানক দেবার আর কোন স্কোপ না পেয়ে নিজের বুক থেকে সিতারাই জং খুলে ফান্ডা খানের বুকে সেটে দিলেন।
সেই থেকে উপমহাদেশীয় সেনাবাহিনী তে “ফান্ডা খান” হয়ে গেল চালু একটা জার্গন।
পুনশ্চঃ
পরমশ্রদ্ধেয় অগ্রজদের কথা থেকে বোঝা গেল ফান্ডা খানের বিভিন্ন উচ্চারণ প্রচলিত আছে, যেমন ফান্ডা খান/ফান্ডে খান/ ফান্নে খান ; যেমন সারভেন্তিসের ডন কুইক্সোটও ডন কুজেত অথবা দন কিয়োতে ইত্যাদি নামে উচ্চারিত। এজাতীয় উচ্চারন বিভিন্নতার কারনে অবশ্য মজা নস্ট হবার সম্ভাবনা কম।
পুনঃ পুনশ্চঃ
স্রেফ অনুসন্ধিৎসার প্রেক্ষিতে অসমর্থিত সুত্র থেকে এইসব জার্গনের শানেনজুল সংগ্রহ করা। তাই অথেন্টিসিটি নিশ্চিত করা দুরূহ।
পাদটীকা : ১. এনসিও মানে নন-কমিশন্ড অফিসার; পদবিতে এরা কর্পোরাল এবং সার্জেন্ট পদবির সেনাসদস্য। ২. ‘সিতারা-ঈ জং’ যুদ্ধে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি-স্বরূপ দেওয়া পাকিস্তান আর্মির সর্বোচ্চ পদক। ৩. ব্রিগেড অ্যাটাক লঞ্চ মানে এক ব্রিগেড পরিমাণ সৈন্যসামন্ত নিয়ে করা আক্রমণ। ৪. রিলিভিং ব্যাটালিয়ন মানে পরিশ্রান্ত-বিধ্বস্ত একটি ব্যাটালিয়নের দায়-দায়িত্ব বুঝে নিতে আসা নতুন ব্যাটালিয়ন। ৫. জিওসি মানে জেনারেল অফিসার কমান্ডিং; সাধারণত একটি পদাতিক ডিভিশন কমান্ডার। ৬. আনপেইড র্যাঙ্ক মানে সম্মানসূচক র্যাঙ্ক বা পদবি।
পরের কিস্তি “পুছা কিউ” নিয়ে….