রোহিঙ্গাদের কারণেই বাঙালি বার্মা অথবা মায়ানমারের নাম শুনেছে, তা তো আর না। বার্মা আজীবনই বাংলাদেশের লাগোয়া দেশ ছিল, আছে আর থাকবে। শরৎ বাবু তার পথের দাবী আর শ্রীকান্ত উপন্যাসে রেঙ্গুন শহর আর বার্মার সম্পদের যে বর্ণনা দিয়ে গেছেন তা বাঙালি পাঠক অনেক আগেই পড়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জেনারেল স্লিমের বার্মা ক্যাম্পেইনের গল্প পড়তে গিয়েও আমরা বার্মার ব্যাপারে অনেক জেনেছি। বার্মাটিক কিংবা বার্মার সেগুন কাঠের আসবাবপত্র আর দরজা আমাদের খুব প্রিয়, বার্মিজ আচার আমরা খুব মজা করে খাই, বার্মিজ স্যান্ডেল পায়ে দেই, আর বার্মার ইয়াবার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষনা করি।
কিন্তু বার্মার সম্পর্কে আসলেই কি আমরা যথেষ্ট জানি? প্রতিবেশী এই রাষ্ট্রটির ইতিহাস, বার্মা থেকে মায়ানমার কিংবা রেঙ্গুন থেকে ইয়াঙ্গুন, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অথবা বৈরিতা, বার্মিজ ইনসারজেন্সি, সামরিক শাসন আর বুদ্ধিস্ট এক্সট্রিমিজম সম্পর্কে আমরা আসলেই কতটা ওয়াকিবহাল?
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধে জড়াবে কিনা? যুদ্ধে জড়ালে মিয়ানমার জিতবে না বাংলাদেশ? এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজবার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট কবে নাগাদ মিটবে? মিয়ানমার কি আদৌ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হবে কিনা? এই সংকট সমাধানে চীন, ভারত, রাশিয়া আর জাতিসংঘের ভূমিকা কেমন হবে? রোহিঙ্গারা যদি আর কখনোই ফিরে না যায় তাহলে কি হবে? এসব নিয়েও আমরা সমান উদ্বিগ্ন! সুনাগরিক হিসেবে আমাদের এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং ভাবনা অত্যন্ত যৌক্তিক।
প্রাচীন বার্মার ইতিহাস
যিশুখ্রিস্টের জন্মের ১১ হাজার বছর আগে বার্মায় মানব সভ্যতার বিকাশ শুরু হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। হাজার বছর ধরেই বার্মার সমুদ্র উপকূল আর নদীবিধৌত উপত্যকা গুলোতে মানুষের বসবাস ছিল। এছাড়াও প্রাচীন চীন এবং প্রাচীন ভারতের মধ্যে স্থলপথে ও নৌপথে যোগাযোগের রাস্তায় অবস্থিত হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বার্মা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রবেশ মুখ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
পিউদের নগররাষ্ট্র
খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতক থেকে চীনের ইউনান প্রদেশ থেকে আসা পিউ (Pyu) জনগোষ্ঠী ইরাবতী উপত্যকা জুড়ে ছোট-বড় নগররাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল। এরা তিবেতো-বার্মান (Tibeto-Burman) ভাষায় কথা বলত। শ্রী ক্ষেত্র ছিল সেইসব নগর রাষ্ট্রের অন্যতম। পিউরা কাঠের ঘরে বসবাস করত যার ছাদ হত সীসা আর টিনের। পুরুষরা নীল পোষাক পরিধান করত, সাথে স্বর্ণের কাজ করা টুপি। আর মেয়েরা বাহারি গহনা দিয়ে খোপা সাজাত। বাচ্চারা মঠে মঠে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নিত আর সুশৃঙ্খল সেই সমাজে সর্বোচ্চ শাস্তি বলতে কয়েক ঘা চাবুক মারাই যথেষ্ট ছিল। ৭ম শতকে পিউরা তাদের রাজধানী শ্রী ক্ষেত্র থেকে উত্তরে হালিংগিতে স্থানান্তর করেছিল।
মনদের মাধ্যমে থেরাভেদা বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার
প্রায় একই সময়ে দক্ষিণে বসতি গেড়েছিল কম্বোডিয়া থেকে আসা মন (Mon) রা। তারা অস্ট্রো-এশিয়াটিক (Austroasiatic) ভাষায় কথা বলত আর থাটন বন্দর ছিল তাদের রাজধানী। খ্রিস্টীয় ৩য় শতকে ভারতীয় সম্রাট অশোকের দূত হিসেবে একদল বৌদ্ধ ভিক্ষু থাটন গিয়েছিলেন বলে জানা যায়।তবে ধারণা করা হয় যে, শ্রীলংকানদের সাথে সমুদ্রপথে বাণিজ্য ইতিহাসের সূত্র ধরে এই মনদের হাত ধরেই শ্রীলঙ্কা থেকে বার্মায় থেরাভাদা বৌদ্ধ ধর্মের আগমন ঘটেছিল। আবার ভারতীয় বনিকদের ব্যাপক আনাগোনার প্রেক্ষিতে মনদের মাঝে ভারতীয় কৃষ্টির দ্রুত বিকাশ ঘটে। ধীরে ধীরে মনরা সারাবিশ্বে থেরাভেদা বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারকে পরিনত হয়। পরে মনদের রাজধানী রেঙ্গুনের ৫০ মাইল উত্তরপূর্বে বাগো নদীর তীরে বাগো শহরে স্থানান্তর করা হয় এবং সেখান থেকেই তারা গোটা দক্ষিণ বার্মা নিয়ন্ত্রন করত।
পাগান সাম্রাজ্য (৮৪৯-১৩০০)
নবম শতকের গোড়ার দিকে তিব্বত থেকে বামাররা এই এলাকায় আসতে শুরু করে এবং উত্তর বার্মায় ইরাবতি নদীর বসতি গড়ে তোলে। ৮ম ও ৯ম শতকে দক্ষিণপূর্ব চীনের নানঝাও সাম্রাজ্যের আক্রমণে পিউ সাম্রাজ্যের পতন হলে বার্মানদের পাগান (Pagan) সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন হয় ৮৪৯ সালে। এরপর ১০৪৪ সালে রাজা আনারাথা বা অনিরুদ্ধ (Anawrahta) পাগান সাম্রাজ্যের বিস্তারে মনোনিবেশ করেন। পাগানদের হাতে ক্রমান্বয়ে উত্তরে পিউ নগররাষ্ট্রগুলো এবং দক্ষিনে মন সাম্রাজ্যের পতন হয়। ১১ শতকের মাঝামাঝি প্রায় সমগ্র বার্মা পাগান সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে। কিন্তু পরে ১২৮৭ সালে মোঙ্গল সম্রাট কুবলাই খান পাগানদের পরাস্ত করে এই সমৃদ্ধ রাজ্য দখল করে নেন।
আভা বংশ (১৩৬৪-১৫২৭)
মোঙ্গলরা ফিরে যাবার পর সারা বার্মা জুড়ে আবারো ছোট ছোট রাজ্যের জন্ম নিতে শুরু করে। এ সব রাজ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আভা, হান্থাওয়াদ্দি পেগু, শান এবং আরাকান। ইরাবতি উপত্যকার উত্তরে আভা রাজ্যের বিস্তার শুরু হয় ১৩৬৪ সাল থেকে। দক্ষিণে মনরাও বাগোকে কেন্দ্র করে নিজেদের শক্তিবৃদ্ধি করতে থাকে এবং থেরাভেদা বৌদ্ধ ধর্মের পীঠস্থানে পরিনত হয়। ১৫২৭ সালে আভা রাজ্য আক্রান্ত হয় উত্তরের শান রাজ্য দ্বারা।
তংগু বংশ (১৫৩১-১৭৫২)
শানদের কাছে পরাস্ত হয়ে আভা রাজ্যের লোকেরা আশ্রয় নেয় দক্ষিণ-পূর্বে সিতাং নদীর তীরে অবস্থিত তন্গূ এলাকায়। এই তন্গূর রাজা তাবিনসেতি আস্তে আস্তে শক্তি সঞ্চয় করে আরাকান ছাড়া বাদবাকি প্রায় সব বার্মিজ রাজ্যগুলো জয় করে তন্গূ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন যা ১৭৫২ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল। ১৭৪০ সালে ফরাসি বেনিয়াদের ইন্ধনে মন জনগোষ্ঠী যে বিদ্রোহের সূচনা করেছিল তার প্রেক্ষিতে ১৭৫২ সালে তন্গূ সাম্রাজ্যের পতন হয় এবং কংবং সাম্রাজ্যের সূচনা হয় যা ১৮৮৫ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল।
সমান্তরালে আরাকানের ইতিহাস
বার্মিজ ইতিহাস পাঠের এই পর্যায়ে আমরা আরাকান নিয়ে আরেকটু বিশদ জেনে নেব। কারন এই বইয়ের মূল উদ্দেশ্য সমগ্র বার্মার ইতিহাস, ভূগোল আর রাজনীতি চর্চা নয় বরং রোহিঙ্গা নিধন আর এর সম্ভাব্য প্রতিকার সম্পর্কে বিশদ জানা। আর তাই এই বইয়ের বাকি অংশে আমরা ক্রমশ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বার্মিজ আলোচনাই বেশি করব।
বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত আরাকান রোহিঙ্গাদের আদি বাসভূমি আর অতি প্রাচীনকাল থেকেই রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বঙ্গোপসাগর এবং নাফ নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম মোহনা-বেষ্টিত আরাকান-ইয়োমা নামের দীর্ঘ পর্বতশৃঙ্গ আরাকানকে বার্মার অন্যান্য অংশ থেকে আলাদা করেছে। এর প্রাচীন নাম ‘রাখাইনপিয়ে’। সংস্কৃত রাক্ষস এবং পালি ইয়াক্কা (যক্ষ) থেকে রাখাইন শব্দটি এসেছে যার অর্থ দানব।
৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ইন্দো এরিয়ানরা আরাকানে বসতি স্থাপন শুরু করে। তার আগে থেকে ম্রু, সাক, কুমিদের মত ছোট ছোট উপজাতীয় গোষ্ঠীরা বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করত। তবে দুর্গম আরাকান-ইয়োমা পর্বতমালার কারণে আরাকানের বসবাসকারীদের ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে বার্মিজদের চেয়ে ভারতীয়দের সাথে মিল বেশি ছিল এবং আরাকানের প্রাচীন শাসকদের বেশিরভাগই হিন্দু ছিলেন। সমুদ্র বাণিজ্যের পথ ধরে ভারত এবং আরব থেকে আরাকানে ইসলাম ধর্মের প্রচার শুরু হয়েছিল সপ্তম শতাব্দীতে।
আরাকানে তামবুকিয়া, তুর্ক-পাঠান, কামাঞ্চি এবং রোহিঙ্গ্যাদের বসবাস সেই আদিকাল থেকেই। তামবুকিয়াদের ইতিহাস শুরু হয়েছে অষ্টম শতক থেকে যখন তাদের পূর্বপুরুষরা রাজা মহা তায়িং চন্দ্রের শাসনামলে আরবদেশ থেকে দক্ষিণ আরাকানে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে।
তুর্ক-পাঠানরা আরাকানের সর্বশেষ রাজধানী ম্রোহং-এর শহরতলি এলাকায় তাদের প্রধান নিবাস গড়ে তোলে। ১৪০৬ সালে আরাকানের ম্রাউক-উ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মীন সোয়া মুয়ং ওরফে নরমিখলা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বাংলার তৎকালীন রাজধানী গৌড়ে পলায়ন করেন। গৌড়ের শাসক জালালুদ্দিন শাহ্ নরমিখলার সাহায্যে ৩০ হাজার তুর্ক-পাঠান সৈন্য পাঠিয়ে বর্মী রাজাকে উৎখাতে সহায়তা করেন এবং নরমিখলা মোহাম্মদ সোলায়মান শাহ্ নাম নিয়ে আরাকানের সিংহাসনে বসেন। তামবুকিয়াদের মতো তুর্ক-পাঠানরাও রাজার অনুমোদনক্রমে আরাকানে স্থায়ী নিবাস গড়ে।
কামানঞ্চিদের পূর্বপুরুষরা ছিল আফগান যারা মোগল সেনাবাহিনিতে যোগ দিয়েছিল। মুঘল রাজপুত্র শাহ সুজার সাথে তারা আরাকানে আগমন করে। উল্লেখ্য যে, ভাই আওরঙ্গজেবের সাথে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পরাজিত হয়ে মোগল যুবরাজ শাহ্ সুজা ১৬৬০ সালে সড়ক পথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হয়ে আরাকানে পলায়ন করেন। তৎকালীন রোসাং রাজা চন্দ্র সুধর্মা বিশ্বাসঘাতকতা করে শাহ্ সুজা এবং তার পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করেন আর কামনচিরা ধীরে ধীরে আরাকানের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পরে। তাদের বংশধরদের অনেককেই এখন রমরী দ্বীপে দেখা যায়।
রোহিঙ্গ্যা জাতিগোষ্ঠির উদ্ভব সম্পর্কে মতভেদ সত্ত্বেও নির্ভরযোগ্য মত হলো, ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আরাকানে আসা ইন্দো-এরিয়ানরাই রোহিঙ্গাদের পূর্বপুরুষ। তাই ধারনা করা হয় বং-ভারতীয় পিতার ঔরসজাত ও আরাকানি মাতার গর্ভজাত বর্ণসংকর জনগোষ্ঠীই রোয়াইঙ্গা বা রোহিঙ্গ্যা। রোহিঙ্গ্যাদের বসবাস প্রধানত উত্তর আরাকানে কেন্দ্রীভূত। ১০০০ সাল নাগাদ মধ্য বার্মা হতে রাখাইনদের আগমনের মধ্য দিয়ে আরাকানে রোহিঙ্গাদের প্রভাব কমতে শুরু করে।
ধারণা করা হয় রোহিঙ্গা নামটি এসেছে আরাকানের রাজধানীর নাম ম্রোহং থেকে: ম্রোহং>রোয়াং>রোয়াইঙ্গিয়া>রোহিঙ্গা। তবে মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্যে আরাকানকে ডাকা হতো রোসাং নামে। এক সময় এই এলাকায় বেঙ্গল মেডিক্যাল সার্ভিসে কর্মরত ঐতিহাসিক ফ্রান্সিস বুকানন বলেন, ১৭৯৯ সালে আরাকানে মূলতঃ দুটো প্রধান জনগোষ্ঠীর বাস ছিল। তাদের একদল ছিল মুসলমান যাদের রোহিঙ্গা নামে ডাকা হতো আর আরেকদল ছিল বুদ্ধ ধর্ম অবলম্বী যাদের রাখাইন বলে ডাকা হতো। রোহিঙ্গাদের নিজস্ব ভাষা ছিল এবং সেই ভাষার নাম ছিল রুইন্গা।
বাংলার দক্ষিণ-পূর্বাংশের সাথে ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে আরাকানের সঙ্গে বাংলার রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আরাকানের ম্রাউক ইউ সাম্রাজ্যের ক্ষমতার রদবদলের সাথে দু দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। আরাকান রাজ্যের রাজা বৌদ্ধ হলেও তিনি মুসলমান উপাধি গ্রহণ করতেন। তার মুদ্রাতে ফার্সি ভাষায় লেখা থাকতো কালেমা। বাংলার সাথে আরাকানের ছিল গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের কারনে আরাকান রাজ দরবারে অনেক বাঙালি মুসলমান কাজ করতেন। মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যচর্চ্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল রোসাং রাজ দরবার। মহাকবি আলাওল রোসাং দরবারের রাজ কবি ছিলেন।
বাংলার সুলতান বারবাক শাহর দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করে বোসাউপিউ ১৪৫৯ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলা দখল করে নেন এবং ১৬৬৬ সালে মুগলদের দ্বারা বিতাড়িত না হওয়া পর্যন্ত প্রায় দুই শত কাল ধরে আরাকানিরাই এখানে রাজত্ব করে। আরাকানিরা চট্টগ্রামে নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করার জন্য অধিকৃত অঞ্চলে অগ্রবর্তী প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে মাটির দুর্গ বা কোট নির্মাণ করে। চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চলে মীরসরাই, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীতে আরাকানিদের নির্মিত বেশ কিছু মাটির কোট বা দুর্গ ছিল। সীতাকুন্ডে তাঁরা নির্মাণ করেছিল কাঠের দুর্গ। সমুদ্রবেষ্টিত সন্দ্বীপেও ছিল কাঠের দুর্গ। কাঠগড় নামে পরিচিত সেসব স্মারকের কোনো চিহ্ন এখন আর নেই।
১৬৬৬ সালে বাংলার মোগল সুবেদার শায়েস্তা খাঁ চট্টগ্রাম পুনর্দখল করেন। চট্টগ্রামের পতনের পর শায়েস্তা খাঁ অভিযান অব্যহত রাখেন এবং আরাকানের কালাদান নদী পর্যন্ত দখল করে নেন। এর ফলে আরাকান রাজ্য সংকুচিত হয়ে একটি ছোট্ট অঞ্চলে পরিণত হয় এবং রাজনৈতিকভাবে বেশ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। ১৭৩১ থেকে ১৭৮৪ সালের মধ্যে আরাকান রাজ্যকে ১৩ জন রাজা শাসন করেন এবং এ রাজাদের গড় শাসনকাল দু বছরের বেশি ছিল না। ১৭৮৪ সালে বার্মার কংবং সাম্রাজ্যের রাজা বোডপায়া আরাকান দখল করে একে বার্মার অধীন করদ রাজ্যে পরিণত করেন।
কিন্তু ১৮২৪ সালে মনিপুর ও আসাম এলাকায় বৃটিশদের সাথে সীমান্ত বিরোধের প্রেক্ষিতে শুরু হয় ১ম এংলো-বার্মিজ যুদ্ধ এবং ১৮৮৫ সালের ৩য় এংলো-বার্মিজ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সমগ্র বার্মা বৃটিশ রাজের করায়ত্ব হয়। স্বাধীন বার্মার শেষ সম্রাট থিবোকে সপরিবারে ভারতের রত্নগিরিতে নির্বাসিত করা হয়।
2 thoughts on “রোহিঙ্গা রঙ্গ-একঃ প্রাচীন বার্মার ইতিহাস – পিউ নগররাষ্ট্র থেকে এংলো-বার্মিজ যুদ্ধ”
অনেক কিছু জানতে পারলাম, আশা করি লেখা চালিয়ে যাবেন।
ধন্যবাদ, ইনশা আল্লাহ।