মাইকেল এইচ হার্ট দারুন একটা বই লিখেছিলেন বিশ্বের অল টাইম বেস্ট ১০০ জন মানুষদের নিয়ে, বইটার নাম ‘দি হান্ড্রেড!’ সেই বইয়ে উনি লিখেছেন, “জানি, মুহাম্মদ (সঃ)কে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে স্থান দেয়ায় অনেকেই বিস্মিত হবেন এবং বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করবেন। কিন্তু তিনি পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, অর্থনীতিক, মানবিক ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়ে সর্বাধিক সফল।” আমাদের প্রিয় মহানবী (সাঃ) এর পুরো নাম আবু আল-কাসিম মুহাম্মাদ ইবনে ʿআবদুল্লাহ ইবনে ʿআবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম। মাইকেল এইচ হার্ট তাকে যথাযথ সম্মান দিতে কার্পন্য না করলেও একটা সময় পর্যন্ত মক্কাবাসীরা মহানবী (সাঃ) এর ইসলামের দাওয়াত পেলে তা নিয়ে উপহাস করে তাকে পাগল আর শয়তানের উপাসক বলে হাসাহাসি করত!
পবিত্র কোরান শরীফের কিছু সুরা আছে যার মেসেজ খুব স্ট্রং, চ্যালেঞ্জিং আর স্ট্রেট ফরোয়ার্ড! সুরা আত-তাকওয়ির (Surah Takwir) তেমনি এক সুরা যা মক্কায় তেমনি এক চ্যালেঞ্জিং সময়ে অবতীর্ন হয়েছিল। চলুন পড়ে দেখি কী লেখা আছে সেই সুরায় আর আজো তা কতটা ভ্যালিড!
﷽
☀️যখন সূর্য গুটিয়ে যাবে, আর তারাগুলো খসে পরবে,
(এই সুরার ওপেনিং আয়াতেই সুর্য গুটিয়ে যাবার যে কথাটি বলা হয়েছে তা সত্যি বেশ ইন্টারেস্টিং! এখন এই বিংশ শতাব্দিতে এসে আমরা জানি যে নক্ষত্ররা আলো আর তাপ হারায়। তারপর এক সময় তা গুটিয়ে গিয়ে ব্ল্যাক হোল হয়ে যায়! ব্ল্যাক হোল আবার তাঁর চারপাশের সব টেনে ভেতরে নিয়ে যায়, আর ব্ল্যাক হোলের ওপাশে কি আছে তা আজো আমাদের অজানা! সুরার এই আয়াতে যে শব্দটি (Kuwwirat) ব্যবহার করা হয়েছে এর মানেও আলো আর তাপ হারানো। সুর্য আলো আর তাপ হারানো মানে পুরো সৌর জগতের সিস্টেম ওলটপালট হয়ে যাওয়া এবং ধ্বংস হয়ে যাওয়া! কারন মহাকর্ষ আর অভিকর্ষে প্যাচ লেগে যাবে ফলে ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যা শুরু হবে তাই হল কেয়ামত!)

☀️আর পর্বতগুলো ঢলে পরবে,
(পাহাড়-পর্বত গুলো আমাদের পৃথিবীর লোড বিয়ারিং কলামের মত। এরা ভূপৃষ্ঠে স্ট্যাবিলিটি দেয়। তাই পর্বতগুলো ডিজস্ট্যাবিলাইজড হওয়া মানেই ভয়াবহ বিপর্যয়ের শুরু!)
☀️আর গর্ভবতী উষ্ট্রীগুলো উপেক্ষিত হবে,
(প্রাচীন আরবে সন্তান সম্ভাবনাময় গর্ভবতী উট ছিল সব চেয়ে পয়া জিনিস। কারন উট ছাড়া মরুভূমিতে চলা অসম্ভব। আর গর্ভবতী উট মানেই আরেকটি উটের সম্ভাবনা। অথচ সেদিন এতটাই ভয়ঙ্কর হবে যে মানুষ তার প্রিয়তম আর পরম আরাধ্যকেও ভুলে যাবে!)
☀️আর যখন বনের পশুগুলোও এক স্থানে জড়ো হবে,
(বাঘে মহিষে এক ঘাটে জল খাওয়া বলতে একটা প্রবাদ আছে। মানে বুনো জীব জানোয়াররা সাধারনত একে অন্যের কাছ থেকে দূরে থাকে। কিন্তু সেদিন এরা সবাই ভয়ে এক জায়গায় জড়ো হবে!)
☀️আর যখন সাগরগুলোতে আগুন লেগে যাবে,
(এই আয়াতে ব্যবহৃত sujjirat শব্দ দিয়ে আগুন লেগে যাওয়া বোঝায়। কিন্তু পানিতে কিভাবে আগুন লাগে? বিজ্ঞানের সুবাদে আমরা এখন জানি যে অক্সিজেন আর হাইড্রোজেন মিলে হয় পানি। তাই সাগরের নিচের পাহাড় পর্বতগুলো যদি উদ্গিরন শুরু করে তাহলে লাভা উপরে উঠে এসে পানিতেও আগুন লাগা অসম্ভব না!)
☀️আর যখন আত্মাগুলোকে একত্র করা হবে,
(শেষ বিচারের আগে জীবিত আর মৃতরা সবাই একত্র হবে। আবার একত্রিতদের ভেতর ভাল আর খারাপ আত্মাদেরও আলাদা করে ফেলা হবে।)
☀️আর যখন জীবন্ত কবরদেয়া কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল?
(আইয়ামে জাহেলিয়াতের ট্র্যাডিশন অনুযায়ী যারা গোপনে নিজেদের কন্যা শিশু হত্যা করত তাদের কন্যারা ফিরে আসবে। এই রূপকের মাধ্যমে বোঝা যায় যে যত গোপনেই অপকর্ম করেন না কেন, সব সেদিন ধরা পরে যাবে। সামান্য সিসি টিভি ফুটেজ আর ডিজিটাল ট্রেস দেখে আজ কে কি করেছে সব ধরে ফেলা যায়, তাই এ ব্যাপারে অন্তত আমার কোনো ডাউট নাই যে এটা খুব সম্ভব!)
☀️আর যখন আমলনামাগুলো খোলা হবে,
(মুনকার নাকির ফেরেস্তারা তাদের লেখা প্রত্যেকের আমল-নামা পেশ করবে আর তা সবার সামনে দেখানো হবে। সিসি টিভি আর স্যাটেলাইট ফুটেজ যদি সেভ করে রাখা যায়, তাহলে এটাও খুব সম্ভব। আপনি স্টেডিয়ামে গিয়ে বিগ স্ক্রিনে যদি মুভি দেখতে পারেন, চোখে ভি আর লাগিয়ে যদি কনফারেন্স করতে পারেন, তাহলে আপনিও নিশ্চয় মানবেন যে এটাও খুব সম্ভব!)
☀️আর যখন আসমানের পর্দা সরিয়ে নেয়া হবে, আর জাহান্নামে আগুন জ্বেলে দেয়া হবে, আর জান্নাতকে যখন নিকটবর্তী করা হবে;
তখন প্রত্যেক ব্যক্তিই জানতে পারবে নিজের পরিনতি!
(এই লাইনটি বেশ ডিপ! kuŝiţat মানে চামড়া ছাড়িয়ে নেয়া যেমন কোরবানীর পশু জবাইয়ের পর আআমরা চামড়া ছাড়াই। আমাদের পৃথিবীর উপর ওজন স্তরের একটা লেয়ার আছে যা মহাকাশের ক্ষতিকর গ্রহাণু আর রশ্মি থেকে আমাদের বাঁচায়। এই পর্দা সরে গেলে গ্রিন হাউস এফেক্ট সহ নানা কারনেই পৃথিবীতে তুলকালাম ঘটে যাবে। আবার অনেক তাফসীরকারকের মতে বেহেস্ত-দোজখের সাথে পৃথিবী একটা পর্দা দিয়ে আলাদা করা আছে, হতে পারে তা একটা টাইম গ্যাপের পর্দা। সেই পর্দা রিমুভ করে দেয়া মানে আমরা তখন বেহেস্ত আর দোজখ দেখতে পাবো।)
☀️কসম, গ্রহদের, যা নিজ নিজ অক্ষে চলে আর অস্ত যায়; আর কসম রাত শেষের; আর প্রভাতের; নিশ্চয় এ কুরআন এক সম্মানিত বার্তাবাহকের আনিত বাণী; যিনি শক্তিশালী আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাসম্পন্ন; যে তাঁর বিশ্বস্ত আর যার কথা মেনে নেয়া যায়।
(মক্কাবাসী শুরুতে মহানবী (সাঃ) এর ইসলামের দাওয়াত পেলে তাকে পাগল বা শয়তানের উপাসক বলে উপহাস করত বলেই এই আয়াতের সুত্রপাত। আজো যারা ইসলামের দাওয়াত পেয়ে উপহাস করে তাদের জন্যও এই লাইনগুলো প্রযোজ্য)

☀️আর তোমাদের সাথী পাগল নয়; আর তিনি তাকে (ফেরস্তা জিব্রাইল আঃ কে) পরিস্কার দেখেছে;
আর তিনি তো অদৃশ্য প্রকাশে কপৃণ নন (মানে, অনেকেই অর্জিত জ্ঞান লুকিয়ে রাখে কিন্ত মহানবী সাঃ তেমন ছিলেন না); আর এসব অভিশপ্ত শয়তানের কোনো উক্তি নয়।
☀️তাহলে কোন পথে তোমরা চলেছ?

☀️এটাতো সৃষ্টিকুলের জন্য উপদেশ (রিমাইন্ডার) মাত্র; তোমাদের মধ্যে যে সরল পথে চলতে চায়, তার জন্য।
☀️কিন্তু মহান আল্লাহ পাক না চাইলে তুমি তো কিছু চাইতেও পারবে না!
(এটা অসাধারন একটা টুইস্ট! মানে আপনি আমি যা খুশি চাইতে পারি আবার পারিও না। যেমনঃ আপনি মিস্টি খেতে খুব পছন্দ করেন আর খেতেও চান কিন্তু আপনার ডায়াবেটিস আছে আর মিস্টি খাওয়া আপনার জন্য বিষ খাবার সমতূল্য! তাই চাইলেও খেতে পারেন না।)
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন আর জান্নাত নসীব করুন! নিশ্চয় তা অসম্ভব না; কারন আমাদের মত অসংখ্য পৃথিবীর স্রষ্টা তিনি আর তিনি চাইলেই আমাদের সব দোষ ক্ষমা করে দিতে পারেন নিমিষেই! নিশ্চয় তিনি সর্বশক্তিমান আর পরম দয়ালু💕